মঙ্গলবার । ১৮ই নভেম্বর, ২০২৫ । ৩রা অগ্রহায়ণ, ১৪৩২
আলাউদ্দিন হত্যায় আসামি শনাক্ত হলেও গ্রেপ্তার নেই

লবণচরায় ট্রিপল মার্ডারের নেপথ্যে জমি সংক্রান্ত বিরোধ!

নিজস্ব প্রতিবেদক

খুলনার ৩১নং ওয়ার্ডে একই পরিবারের দুই শিশুসহ তিনজনকে হত্যার ঘটনায় এখনও এলাকায় তোলপাড় চলছে। হত্যাকাণ্ডে জড়িত কাউকে এখনও গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এ ঘটনায় এখনও কোনো মামলা হয়নি। পুলিশের পাশাপাশি ডিবি, র‌্যাব এবং পিবিআইয়ের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করেছেন। তিনটি সংস্থাই পৃথকভাবে ছায়া তদন্ত করছে। হত্যার পেছনে জমি সংক্রান্ত বিরোধ থাকতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে নিহতের স্বজন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

অপরদিকে সোনাডাঙ্গা থানার করিম নগরে গুলি ও গলা কেটে আলাউদ্দিন হত্যাকাণ্ডে এখনো মামলা দায়ের হয়নি এমনকি আসামি শনাক্ত হলেও কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

গত রবিবার রাতে লবণচরা থানার দরবেশ মোল্লা গলির বাড়ি থেকে মহিতুনন্নেছা (৫৫), তার নাতি মোস্তাকিম (৯) এবং ফাতিহা আহম্মেদ তাইয়্যেবা (৮) এর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। শিশু দু’টি শেফার ও রুবি দম্পতির সন্তান। মহিতুনন্নেছা রুবি আক্তারের মা।

সোমবার সকালে ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, উচু সীমানা প্রাচীর দিয়ে ঘেরা বাড়ির প্রধান ফটক তালাবদ্ধ। বাইরে উৎসুক মানুষের ভীড়। স্থানীয়রা জানান, বাড়ির মালিক শেফার আহমেদ খুলনা চেম্বার অফ কমার্সে জনসংযোগ কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত। তার স্ত্রী রুবি আক্তার বাগেরহাট জেলার রামপাল উপজেলার ভূমি অফিসে কর্মরত। তাদের এক ছেলে ও এক মেয়ে দু’জনই স্থানীয় একটি মাদ্রাসার শিক্ষার্থী। স্বামী-স্ত্রী চাকরিজীবী হওয়ায় রুবি আক্তারের মা মহিতুনন্নেছা ওই বাড়িতে থেকে নাতিদের দেখাশোনা করেন।

প্রতিবেশী শাহীনা বেগম জানান, “রবিবার দুপুরে শেফার আহমেদ শিশু দু’টিকে মাদ্রাসা থেকে বাড়িতে দিয়ে কর্মস্থলে যান। এশার আযানের পর রুবি আক্তার কর্মস্থল থেকে ফিরে এসে বাড়ির গেটে তার মাকে ডাকতে থাকেন। কিন্তু ভেতর থেকে কোনো সাড়া শব্দ আসছিল না। পরে বাড়ির পেছন দিক থেকে ভেতরে উকি দিয়ে সব এলোমেলো দেখে চিৎকার শুরু করেন। পরে প্রতিবেশীরা ভেতরে প্রবেশ করে মুরগির খামারে নানি ও দুই শিশুর লাশ দেখতে পান।”

তিনি আরও জানান, “জমিটি শেফার মা জনৈক মুনসুর সাহেবের কাছ থেকে ৪ বছর আগে কেনেন। এরপর তারা সেখানে একতলা ভবন নির্মাণ করে বসবাস করেন। দু’জনে চাকরিজীবী হওয়ায় স্থানীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ কম ছিল। তিন কক্ষের ভবনের একটিতে দেশি মুরগী পালন করতেন রুবি আক্তার। সেই কক্ষে তিনি কখনও তালা দিতেন না। ওই ঘরেই তিন জনের লাশ পাওয়া যায়।”

এদিকে মৃত শিশুদের চাচা সাব্বির আহমেদ জানান, “ময়নাতদন্ত শেষে রূপসা উপজেলার বাগমারা সামছুর রহমান মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে মাগরিব বাদ নামাজে জানাজা শেষে আল আকসা মসজিদ সংলগ্ন কবরস্থানে তিন জনের দাফন সম্পন্ন হয়।”

হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে তিনি বলেন, “রূপসা উপজেলার পালেরহাট ইউনিয়নের ভবণীপুর গ্রামে জমি নিয়ে আত্মীয়দের মধ্যে বিরোধ রয়েছে। এর জেরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে।”

নগরীর লবণচরা থানার ওসি হাওলাদার সানওয়ার হুসাইন মাসুম বলেন, “নিহতের তিন জনের মাথার পেছনে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। লাশের পাশে রক্ত মাখা ইট উদ্ধার করা হয়েছে। ওই ইট দিয়ে নানী সাহিদুন্নেছা এবং নাতি মোস্তাকিম ও ফাতিহার মাথায় আঘাত দিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।”

তিনি বলেন, “ট্রিপল মার্ডারের ব্যাপার থানায় এখনও কোনো মামলা হয়নি। বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছি। তবে তদন্তের স্বার্থে এখন কোনো কিছু বলা সম্ভব হচ্ছে না।”

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী কমিশনার (মিডিয়া) ত ম রোকনুজ্জামান বলেন, “হত্যাকারীরা পেশাদার খুনি। বাড়ির ভেতর সিসি ক্যামেরা আছে ভেবে তারা গেটের বাইরের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। কোনো আলামত তারা সেখানে রাখেনি। লবণচরা থানা পুলিশের পাশাপাশি ট্রিপল মার্ডারের বিষয়ে র‌্যাব, গোয়েন্দা পুলিশ এবং প্রশাসনের একাধিক সংস্থা কাজ করছে। দ্রুত অপরাধীরা গ্রেপ্তার হবে।”

এদিকে মাদক কারবারকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের হাতে খুন হয় করিমনগর এলাকার বাসিন্দা আলাউদ্দীন মৃধা। এঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। থানায় পরিবারের পক্ষ থেকে এখনও কোন মামলা দায়ের করা হয়নি। হত্যাকান্ডের সাথে সম্পৃক্ত এমন কাউকে এখনও পর্যন্ত গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

নিহতের স্ত্রী নার্গিস বেগম বলেন, সন্ধ্যায় তাদের ভাড়া বাসায় বসে স্বামীর সাথে গল্প করছিলেন। সন্ধ্যা ৭ টার দিকে ৩টি মোটরসাইকেল যোগে এসে ৬-৭ জন অস্ত্রধারীরা তাদের বাসায় প্রবেশ করে। খুব কাছ থেকে ৩ টি গুলি করে। যাওয়ার সময় মৃত্যু নিশ্চিত করতে চাপাতি দিয়ে কলা কেটে ফেলে রেখে যায়।

তিনি গনমাধ্যমকর্মীদের কাছে কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, সোনাডাঙ্গা ময়লাপোতা মোড়ের আপন দু’সহোদর এ হত্যাকান্ডের সাথে অংশ নেয়। এছাড়া পুলিশের গুলিতে এক পা হারানো এক মাদককারবারীও এ হত্যাকান্ডে অংশ নেয় বলে তিনি জানান।

কারা হত্যা করেছে সিসি ক্যামেরায় তা ধরা পড়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এরপরও আসামি গ্রেপ্তারে পুলিশের কোন তৎপরতা নেই। নিহতের স্বজনদের দাবি খুনিরা এলাকায় মাদক কারবারির সাথে জড়িত এবং একটি রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় সকল অপকর্ম পরিচালনা করে।

পুলিশের একটি সুত্র জানায়, হত্যা মিশনে অংশ নেওয়া কয়েকজনকে ইতোমধ্যে পুলিশ শনাক্ত করেছে। তাদের গ্রেপ্তারে পুলিশ অভিযান শুরু করেছে। ওই সুত্রটি আরও জানায়, নিহত আলাউদ্দিন মৃধা মাদককারবারীর সাথে জড়িত ছিল। তার নামে একাধিক মামলা ছিল। একটি মাদক মামলায় তার ৬ মাসের সাজা হয়। সম্প্রতি কারাগার থেকে মুক্তি পান।

গতকাল সোমবার ময়না তদন্ত শেষে আছরবাদ সোনাডাঙ্গার ময়লাপোতা মোড়ের নুরানী জামে মসজিদের সামনে নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে বসুপাড়া কবরস্থানে দাফন করা হয়।

সোনাডাঙ্গা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ কবির হোসেন বলেন, থানায় কোন মামলা হয়নি। কোন গ্রেপ্তার নেই।

খুলনা গেজেট/এমএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন